সংগৃহীত ছবি।
|
পুরো বিশ্বকে থামিয়ে দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস! দেশের পর দেশে জরুরী অবস্থা শুরু হয়ে গেছে। বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। চীন সৃষ্ট এই ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।
একের পর এক ইভেন্ট বন্ধ হতে শুরু করেছে। তার সাথে থেমে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। কোভিড-১৯ বাংলাদেশেও শনাক্ত করা গেছে। এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার সাথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গার্মেন্টসগুলো।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯টি পোশাক কারখানার বিভিন্ন পরিমাণে অর্ডার স্থগিত করা হয়েছে। যার ফলে ১৫০০ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ পরিস্থিতিতে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
রোববার রাতে এক ভিডিও বার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন – ভয়াবহ অবস্থা চলছে আমাদের। বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন মহাদেশ থেকে সব ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশ আপাতত বালিত বা স্থগিত করছে। বলছে স্থগিত, কিন্তু আমাদের জন্য স্থগিত করা কিংবা বাতিল করা একই কথা।
তিনি আরো বলেন – কাজেই সবকিছু মিলিয়ে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯টি কারখানা আমাদের ওয়েব পোর্টালে এন্ট্রি করেছে। এর মধ্যে ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২টি পোশাক কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার (১৪৮ কোটি ডলার)। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
রুবানা হক বলেন – ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করতে আমরা একটি ওয়েব পোর্টাল করেছি। সেখানে প্রায় ৪ হাজার কারখানার মধ্যে ১ হাজার ৮৯টি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এন্ট্রি দিয়েছে। এটা বাড়তে বাড়তে কোন অবস্থায় যায়, আমরা এখন সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি। এ পরিস্থিতি দেশের পোশাক খাতের জন্যে খুবই উদ্বেগের।
এর আগে রোববার বিকালে সংগঠনটি জানায়, এখন পর্যন্ত ৩৪৭টি কারখানার ৯২৭ মিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্যের অর্ডার স্থগিত হয়েছে। এর মধ্যে ওয়েবসাইটে ১৮৪টি কারখানার ৫৬১ মিলিয়ন ডলার ও ইমেইলে ১৬৩টি কারখানার ৩৬৫ মিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিতের তথ্য জানানো হয়েছে। বিজিএমইএ নেতারা জানিয়েছেন, বিশ্বের স্বনামধন্য প্রায় সব বায়ারই ক্রয়াদেশ বাতিল করছে।
আরও পড়ুন>>> করোনা : আহ্বান জানালেন শীর্ষ আলেমগণ
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন – তৈরি পোশাক খাতের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে না এলে ক্রয়াদেশ বাতিলের পরিমাণ বাড়বে।
তারা বলছেন – একদিকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন করে ক্রয়াদেশও আসছে না। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম এই খাতটি। এই অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন দেয়াও সম্ভব হবে না। তা হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
এদিকে সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের বড় একটি অংশ এখনই কারখানা বন্ধের পক্ষে নয়। অন্য একটি পক্ষ অবশ্য শ্রমিকের সুরক্ষায় গার্মেন্টস বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন – আমরা গার্মেন্টস চালু রাখার পক্ষে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন – আমরা মনে করি, কারখানা বন্ধ করে দিলেই সমাধান হবে না। বরং বন্ধ করে দিলে তা আরও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।তবে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি মনে করেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে কারখানা বন্ধ করা উচিত।
দিনের ব্রেকিং নিউজ সবার আগে পেতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন:
সরকারি এবং বেসরকারি চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেতে
পাঠকের মতামত