ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি ফল হচ্ছে “লেবু”। লেবুতে যে পরিমাণে সাইট্রিক এসিড আছে তা মানবদেহের পাথুরে রোগের ওজন্য খুবই উপকারি। কারণ সাইট্রিক এসিড শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম নির্গত হতে সাহায্য করে। লেবুর খোসার ভেতরের অংশে ‘রুটিন’ নামের বিশেষ ফ্ল্যাভানয়েড উপাদান আছে যা শিরা এবং রক্তজালিকার প্রাচীরকে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সুরক্ষা দেয়। ফলে স্বভাবতই হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
লেবুর অন্যান্য ব্যবহারও কম নয়। রান্নায় বা আহারে লেবুর ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মতভাবেই স্বাস্থ্যপ্রদ। ত্বক বা রূপচর্চায় লেবুর ব্যবহার ঐতিহ্যগত ভাবেই সুপ্রচলিত। বয়সজনিত মুখের স্পট বা দাগ সারাতে লেবুর রস যথেষ্ট কার্যকরী। লেবুর রস ব্যবহারে মুখের ব্রণও দ্রুত সারে। বাজারের ভেজাল মিশ্রিত পানীয় না খেয়ে টাটকা লেবুর রসের সাথে সামান্য চিনি বা মধু মিশিয়ে লেমোনেড তৈরি করা হয় যা একই সাথে তৃষ্ণা মেটায়।
চিকিৎসকগন লেবুকে সবকিছুর মহৌষধ মনে করে। সাধারণ সর্দি–কাশি থেকে ক্যানসার পর্যন্ত প্রতিরোধ করে লেবু। দৈনিক ভিটামিন সির চাহিদা পূরণের জন্য এক টুকরা লেবু খাওয়া উচিৎ বলে মনে কোন কোন চিকিৎসক। ছোটখাটো কাজের সহজ টোটকা হলো লেবু।
তবে লেবুর ব্যবহার এইখানেই শেষ নয়। লেবু শরীরের যেমন উপকার করে, ঠিক একইভাবে গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেও পটু এই ছোট একটি ফল। চলুন জেনে নেই লেবুর এমনই কিছু বহুমুখী ব্যবহার।
খাওয়া ছাড়া লেবুর আরেকটি প্রধান কাজ হচ্ছে কাপড়ের কঠিন দাগ তুলে পরিষ্কার করা। অনেক সময় কাপড়ে কালির দাগ পড়ে। কালির সহজে উঠতে চায় না। কিন্তু লেবু এখানে আপনার পরিশ্রম, সময় এবং কাপড় দুটোকেই রক্ষা করবে। কালির দাগ তুলতে দাগের ওপরে লেবুর টুকরা ভালো করে ঘষে নিন। এরপর ভালো করে কাপড় ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন। এই পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে যদি কাপড়টি ঘাসের ওপর রেখে শুকানো যায়।
সাদা কাপড় বেশ কয়েকবার ধুলে হলদেটে ভাব চলে আসে। এই সমস্যায় দুই মগ পানিতে আধা কাপ লেবুর রস মিশিয়ে কাপড় কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে নিন। সাদা কাপড় হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পাবে।
লেবু পোকামাকড় ও দুর্গন্ধ দূর করতে খুব সহায়তা করে। সাধারণত দুর্গন্ধ দূর করতে আমরা এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করি। তবে লেবু দিয়ে খুব সহজেই আপনি ঘরে বসে এয়ার ফ্রেশনার তৈরি করে ফেলতে পারবেন। রান্নাঘরে অনেক সময় ময়লা–আবর্জনা ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। একটি লেবু কেটে তা ময়লার থলেতে রেখে দিন। এটা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস করে।
লেবুর তীক্ষ্ণ গন্ধ পোকামাকড় দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রস জানালা, দরজায় স্প্রে করে নিন। এ ছাড়া লেবু অর্ধেক করে কেটে এতে কয়েকটি লবঙ্গ গেঁথে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় এমন জায়গায় রেখে দিন। মশা ও পোকা দূর হয়ে যাবে।
রান্নাঘর পরিষ্কার করতে লেবুর বিকল্প নেই। ফ্রিজের প্রবল দুর্গন্ধ দূর করতে লেবু ব্যবহার করুন নিশ্চিন্তে। কাজ কিন্তু বেশি না! কয়েক টুকরা লেবু কেটে ফ্রিজে রাখতে পারেন। এতে ফ্রিজে দুর্গন্ধ হবে না। ফ্রিজ পরিষ্কার করার পর শেষবার লেবুর রস মেশানো পানি দিয়ে মুছে নিন। এতে ফ্রিজ জীবাণুমুক্ত হবে, সুগন্ধও থাকবে।
জীবাণু বা অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করতে চপিং বোর্ডে অর্ধেক লেবু রগড়িয়ে নিতে পারেন। এতে বোর্ড ঝকঝকে থাকবে। পিতল, তামা বা স্টেইনলেস স্টিলের তৈজসপত্র চকচকে রাখতে লেবুর রস ও ছাই ভেলকি দেখাবে। প্রেশারকুকার বা চায়ের কেটলির নিচে কঠিন দাগ পড়েছে? লেবুর খোসার পাতলা টুকরো করে কুকার বা কেটলিতে পানির মধ্যে দিয়ে দিন। এবার সেদ্ধ করুন। এরপর সেই পানি দিয়েই ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া প্রথমবার পানির ফিল্টার এবং প্রেশারকুকার ব্যবহারের আগে লেবু দিয়ে ঘষে, ধুয়ে ব্যবহার করা উচিত।
রান্নাঘরে সব সময় তেল-মসলা ব্যবহারের কারণে, সিঙ্ক তেলতেলে হয়ে থাকে। সিঙ্ক পরিষ্কার রাখতে লেবু ভালো কাজ করে। সে ক্ষেত্রে লেবুর সঙ্গে লাগবে লবণ আর গরম পানি। সিঙ্কে লেবুর রস, অল্প লবণ ও গরম পানি ছিটিয়ে দিন। এবার ব্রাশ দিয়ে ঘষুন। সিঙ্ক একেবারে নতুনের মতো ঝকঝকে হয়ে উঠবে।
একটা বোতলের পানিতে কিছুটা ভিনিগার আর লেবুর রস মিশিয়ে রাখুন। ভিনিগার, লেবুমিশ্রিত পানিতে থালাবাসন ধুলে সেগুলো আরও বেশি পরিষ্কার হয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরের চটচটে ভাব কাটাতে ব্যবহার করা যায় লেবু। দুই কাপ পানিতে দুই থেকে তিন চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ওভেনের ভেতরে রেখে দুই মিনিট চালিয়ে দিন। এবার মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতরের দেয়াল একটা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।
সালাদের ফল বাদামি হওয়া এড়াতে লেবুর রস চিপে দিন। পেঁয়াজ, রসুন কিংবা মাছ কাটার পর হাতে দুর্গন্ধ হয়। এই গন্ধ সহজে যেতে চায় না। এই দুর্গন্ধ সহজেই কাটাতে পারে লেবু। পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে তা দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে দুর্গন্ধ থাকবে না।
বাথরুম ও টয়লেটের পানির বা সাবানের দাগ পড়ে যায়। একইসাথে দুর্গন্ধেরও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে টয়লেটের কমোডে হলদে দাগ সহজে দূর হয় না। তার জন্য আবারও শক্তিম্যান হিসেবে লেবুকে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লেবুর রস কমোডে ঢেলে, ঘষে পরিষ্কার করুন। মিনিট পাঁচেক পর, অল্প বেকিং সোডা কমোডে ছড়িয়ে, একটা শুকনো কাপড় দিয়ে ঘষে নিন। সপ্তাহে দুই দিন করে দেখুন, আপনার কমোড কেমন ধবধবে সাদা হয়ে উঠেছে।
বেসিন কিংবা বাথটাবে বেকিং সোডা ছড়িয়ে দিন। এবার লেবুর খোসা দিয়ে পুরো বেসিন বা বাথটাবটি ঘষে নিন ভালো করে। পরিষ্কার ও ঝকঝকে হয়ে যাবে আপনার বেসিনটি।
ঘরের আসবাব জীবাণুমুক্ত রাখতে মোছার সময় ব্যবহার করুন লেবুর রসমিশ্রিত পানি। বাড়িতে অ্যাজমা বা অ্যালার্জির রোগী থাকলে অবশ্যই এই টিপস মেনে চলা উচিত। ঘর মোছার সময়ও ব্যবহার করতে পারেন লেবুর রস মেশানো পানি।
পাঠকের মতামত